উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর গড়ে ২২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে মৌসুমে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টন আলু নষ্ট হয়, প্রতি কেজি ১৫ টাকা ধরলেও ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০০–৭৫০ কোটি টাকা।
আমের ক্ষেত্রেও অবস্থা সমান; নওগাঁয় গত মৌসুমে ৪ দশমিক ৫ লাখ টন আমের মধ্যে ১–১.৫ লাখ টন নষ্ট হয়, যা টাকায় প্রায় ৬০০ কোটি। রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমও ফলনের ১০–১৫ শতাংশ নষ্ট হয়, যার ক্ষতি প্রায় ৩৬০ কোটি। এছাড়া, শীতকালীন সবজির উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট বা কম দামে বিক্রি হয়, যা ২৫০–৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হিসেবে ধরা হয়। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, হিমাগারে আগাম বুকিং না দিলে ফসল সংরক্ষণ করা যায় না। যারা বুকিং পায়, তাদের বেশি ভাড়া দিতে হয়। মৌসুম শেষে আড়তদাররা ধীরে ধীরে বাজারে ফসল ছাড়ে, যার মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণ ও লাভ তোলেন। বগুড়ার কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, হিমাগারে আলু রাখলে খরচ বেশি, কিন্তু না রাখলে বিক্রি করতে বাধ্য হন কম দামে, ফলে লোকসান হয়। কৃষি গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান খান বলেন, সংরক্ষণ ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে কৃষক লোকসান গুনছেন, অথচ আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অধিক লাভ তুলছেন। তিনি উপজেলার পর্যায়ে ছোট-মাঝারি হিমাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষককে সুরক্ষিত করতে শুধু হিমাগার নয়, পুরো বাজার ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। উপজেলা পর্যায়ে ছোট হিমাগার, প্রি-কুলিং, গ্রেডিং, প্যাকহাউস এবং আধুনিক কোল্ডচেইন থাকলে মৌসুম শেষে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এছাড়া, সরকারি তত্ত্বাবধানে স্বচ্ছ হিমাগার বরাদ্দ ব্যবস্থা, ডিজিটাল ট্র্যাকিং ও কৃষক-সহযোগী সমবায় মডেল চালু করা গেলে আড়তদার ও পাইকারদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণও কমানো সম্ভব। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গে আলু ও আম সংরক্ষণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নতুন হিমাগার স্থাপনের জন্য প্রায় ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারি তত্ত্বাবধানে বেসরকারি বিনিয়োগ, সমবায় ও কৃষক সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও রংপুরের আলু, আম ও সবজির পোস্ট-হার্ভেস্ট ক্ষতি ২০–২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০–১২ শতাংশে আনা সম্ভব হবে। এতে কৃষকের লোকসান কমবে, বাজারে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হবে। বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি মাঝারি হিমাগার, প্রি-কুলিং ও প্যাকহাউস স্থাপন করলে কৃষক সরাসরি ফসল সংরক্ষণ করতে পারবে। রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, উপজেলা পর্যায়ে ছোট ও মাঝারি হিমাগার স্থাপন করা হবে, যার সঙ্গে প্রি-কুলিং, গ্রেডিং ও প্যাকহাউস সুবিধা থাকবে।


Reporter Name 












