ঢাকা
,
বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
৪ ঘণ্টা পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি কার্গো ভিলেজের আগুন
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা : প্রধান উপদেষ্টা
মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কাজ হারাবেন ২ লক্ষাধিক জেলে
আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে ঢুকেছি: শেষ জাহাজ আটকের আগে ভিডিও বার্তায় শহিদুল
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের নিন্দায় বাংলাদেশ
ফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত ৬০
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৫ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে তীব্র যানজট
প্রতিশোধ নিলে আমার ওপর নিন, কর্মীদের ছুঁবেন না’ : থালাপতি বিজয়
প্যারিস ফ্যাশন উইকে আলোচনায় ঐশ্বরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি দপ্তরে শাটডাউন, ছাঁটাইয়ের ঝুঁকিতে লাখো কর্মী
স্যামসন এইচ চৌধুরী : গ্রাম থেকে গড়ে ওঠা শিল্প বিপ্লবীর অনন্য কাহিনী
-
স্টাফ রিপোর্টার - আপডেট সময় ০৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- ২৬ বার পড়া হয়েছে
ব্যবসা মানেই শুধু মুনাফা নয়; মানুষের কল্যাণে কাজ করার শক্তিশালী হাতিয়ার-এই কথাটিই আজীবন বুকে ধারণ করেছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। তিনি শুধু একজন সফল উদ্যোক্তা ছিলেন না, ছিলেন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এক সমাজভাবুক। তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে আবারও ফিরে দেখা যায় সেই মানুষটিকে, যিনি বাংলাদেশের ব্যবসা ও শিল্পজগতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন। গতকাল ছিল এই শিল্প-বিপ্লবীর জন্মশতবার্ষিকী।বাংলাদেশ ভ্রমণ
ছোট গ্রাম থেকে বড় স্বপ্ন : ১৯২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের আড়–য়াকান্দি গ্রামে জন্ম নেন তিনি। শৈশব কাটে চিকিৎসক বাবার আদর্শে গড়ে ওঠা এক মানবিক পরিবেশে। স্কুলজীবনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও পারিবারিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে স্বপ্ন দেখা থেমে যায়নি।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুম্বাই পাড়ি দিয়ে যোগ দেন রয়াল ইন্ডিয়ান নেভিতে। সেখানে তাঁর দৃঢ় চরিত্রের পরিচয় মেলেÑপ্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে রাডার অপারেটর হওয়ার দাবিতে চার দিন কারাবরণ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে সক্ষম হন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনের সংগ্রামী যাত্রা।
উদ্যোক্তার প্রথম পাঠ : যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে ডাক বিভাগে চাকরি নিলেও তাঁর মন টেকেনি। বাবার পরামর্শে দায়িত্ব নেন পাবনার ‘হোসেন ফার্মেসি’র। সেখান থেকেই জন্ম নেয় ব্যবসা ও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। ১৯৫৬ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বাড়িতেই স্থাপন করেন ছোট্ট একটি ওষুধ কারখানাÑ‘ইসনস্’। স্ত্রী অনিতা চৌধুরী ছিলেন তাঁর প্রথম সহকর্মী। এই ক্ষুদ্র উদ্যোগই ছিল স্কয়ার সাম্রাজ্যের প্রথম বীজ।
‘স্কয়ার’-নামেই পূর্ণতা : ১৯৫৮ সালে তিন বন্ধুকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্কয়ার’। নামের পেছনে ছিল গভীর তাৎপর্য—চার বন্ধু মানেই চার বাহু, আর স্কয়ার প্রতীক শুদ্ধতা ও পূর্ণতার। সততা, শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায়কে তিনি মন্ত্রে পরিণত করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল—“সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই।” এই দর্শনকেই তিনি লালন করেছেন আমৃত্যু। ১৯৮৫ সালে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পেছনে ফেলে দেশসেরা হয়ে ওঠে। সেই সাফল্যের ধারা আজও অব্যাহত। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও পৌঁছে গেছে স্কয়ারের পণ্য।
বিস্তৃত সাম্রাজ্য, বিস্তৃত অবদান : ওষুধ শিল্পে সাফল্যের পর তিনি থেমে থাকেননি। ধীরে ধীরে স্কয়ার প্রসারিত হয় নানা খাতে—টয়লেট্রিজ, টেক্সটাইলস, কৃষি ও ভেটেরিনারি প্রোডাক্টস, কনজিউমার গুডস, হাসপাতাল, এমনকি গণমাধ্যম পর্যন্ত। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় প্রতিটি নতুন প্রতিষ্ঠানে। তবে শিল্পপতি হয়েও তিনি কখনো মানবিক মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাননি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবায় তিনি ছিলেন মুক্তহস্ত। তাঁর দান ও অবদান আজও স্মরণীয়।
উত্তরসূরিদের অনুপ্রেরণা : ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি, ৮৬ বছর বয়সে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে শেষ হয়নি পথচলা। তাঁর রেখে যাওয়া মূল্যবোধ ও ভিশন আজও বহন করে চলেছেন তাঁর উত্তরসূরি ও স্কয়ার পরিবারের ৮১ হাজার কর্মী।
স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে পুরো জাতি। তাঁর জীবন দেখিয়ে দিয়েছেÑঅধ্যবসায়, সততা আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে একজন মানুষ গ্রামের গ-ি পেরিয়ে গড়ে তুলতে পারেন এক বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান।
তিনি প্রমাণ করে গেছেনÑপ্রকৃত শিল্পপতি শুধু ব্যবসায়ী নন, তিনি সমাজেরও এক নির্মাতা। আর সেই কারণেই আজও তিনি উদ্যোক্তাদের কাছে এক অনন্য প্রেরণার নাম।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ ক্ষণজন্মা মানুষটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সমাজের সর্বস্তরে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হন। ৭ জানুয়ারি মৃত্যুর দুইদিন পর পাবনায় তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ও মূল্যবোধের পথ ধরেই তাঁর উত্তরসূরিরা এগিয়ে চলেছেন, এগিয়ে চলেছে স্কয়ার পরিবারের ৮১ হাজার সদস্য, যা প্রমাণ করে স্যামসন এইচ. চৌধুরী তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন।#
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ



















